দ্বিতীয়
দিনঃ রেমাক্রি থেকে নাফাখুম হয়ে থুইসা পাড়া
পরদিন
খুব ভোরে ঘুম ভাঙল মোরগের ডাকে। মনে পড়ে গেল ছেলেবেলার গ্রামের বাড়িতে কাটানো
দিনগুলির কথা, যখন এই শীতের মধ্যে ঘুম থেকে উঠে কাঁপতে কাঁপতে হাজির হতে হত
মাদ্রাসায় আরবি পড়ার জন্য। মাদ্রাসার মউলুভি সাহেবকে মনে হত দুনিয়ার সবচেয়ে জঘন্য
লোক। সে যাই হোক ঘড়িতে দেখি ভোর ৬ টা বাজে। তারাতারি উঠে পাশে শুয়ে থাকা এক্রাম
ভাইকে জাগিয়ে দিয়ে ওজু করে দুইজনে ফজরের নামাজ আদায় করে আবার স্লিপিং ব্যাগে ঢুঁকে
গেলাম। ঠিক আটটায় রোমেলের ডাকে আবার আরামের নিদ্রা ছাড়লাম। রেডি হয়ে নিয়ে সবাই
মিলে খিচুড়ি আর ডিম ভাজা দিয়ে সকালের নাস্তা সেরে নিলাম। সারাদিন অনেকটা পথ চলতে
হবে, উপরন্তু দুপুরের খাবারের কোন ব্যবস্থা নেই। তাই যতটা পারলাম পেট ভরিয়ে নিলাম।
এবার যাত্রা শুরু।
শুরুতেই
রেমাক্রি বাজারের নিচে নেমে সাঙ্গু নদীর পাড়ে বেশ কিছু গ্রুপ ছবি তুললাম। আমাদের
এবারের গাইড ১৬ বৎসর বয়সী মারমা কিশোর সা সুই মারমা। বেশ হাসি খুশি প্রাণোচ্ছল
কিশোর। যাত্রার শুরুতেই সাঙ্গু নদী পার হতে হোল। পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে জানি নাফাখুম
পর্যন্ত পৌছতে ৫ বার এই নদী এপার ওপার করতে হবে। দলের নতুন সদস্যরা দেখলাম এই
ব্যাপারটায় বেশ উৎসাহিত।
লম্বা
ত্রেইল ধরে পিঁপড়ার সারির মত এগিয়ে চললাম পুরো দল। দলের সর্ব কনিষ্ঠ সদস্যের বয়স
মাত্র ৮, আমার বন্ধু রোমেলের ক্লাস ওয়ান পড়ুয়া ভারী চশমার নিচে বুদ্ধিদীপ্ত চোখের
সদা চঞ্চল রাফি, আর সর্ব জ্যেষ্ঠ সদস্য অ্যাডভোকেট ইভা আপা। বাকিদের বয়স মোটামুটি
কাছাকাছি, ২৫ থেকে ৩৫ এর মধ্যে। সদস্যদের মধ্যে অনেকেই পূর্ব পরিচিত, কেউ কেউ আবার
একেবারেই নতুন মুখ। অধিকাংশ সদস্যেরই আগে কোন ত্রেকিং এর অভিজ্ঞতা নেই। গ্রুপের অধিকাংশই চিকিৎসক, বাকিরা মিশ্র
পেশাজীবী। এই দল নিয়েই সা সুই মারমার নেতৃতে আগিয়ে চলল আমাদের ছোট কিন্তু
দুর্দমনীয় অভিযাত্রী দল। সবার চোখে মুখে একটা চোয়াল ভাঙ্গা প্রতিজ্ঞা, জয় করতে হবে
নাফাখুম, আর অমিয়াখুম। সেই লক্ষ্যে প্রথম পদক্ষেপ রেমাক্রি খালের পাশ দিয়ে আগিয়ে
চললাম নাফাখুমের দিকে। পিছনে পড়ে রইল কোলাহল মুখর রেমাক্রি বাজার। আমরা যখন যাত্রা
শুরু করলাম তখন প্রায় ৯.৩০ বাজে। সূর্য এখনও তার পূর্ণ তেজ পায়নি। শীতের সকালের
মিষ্টি রোদে পাহাড়ের পাশ দিয়ে বয়ে চলা রেমাক্রি খালের পাড় ধরে হাটতে ভালই লাগছিল।
পাহাড়ের গা ছুয়ে বয়ে যাওয়া শীতল বাতাস চড়াই আর উৎরাইয়ের ক্লান্তি ভুলিয়ে দিচ্ছিল।
যাত্রা শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা পাড় হলাম রেমাক্রি ফলস, যা অন্য নামে
রেমাক্রি খালের মুখ বলেও পরিচিত। ফলস বলতে আদতে যা বোঝায় তেমন কিছু না, বেশ কিছু
লেয়ার এর পানির ক্যাসকেড। চওড়ায় বেশ বড়, কিন্তু উচ্চতা বেশি নয়, গভিরতাও কম। এখন
শুস্ক মৌসুম বলে পানি কম, কিন্তু ভরা বর্ষায় এর রূপ দেখেছি, পূর্ণ যৌবনা, উচ্ছল,
প্রাণবন্ত এক ঝর্ণাধারায় রূপ নেয়া রেমাক্রি ফলস।
সত্যি কথা বলতে কি বান্দরবনের পূর্ণ রূপ উপভোগ
করতে হলে আপনাকে অবশ্যই বর্ষায় আসতে হবে। খালের কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও বা গোড়ালি
পর্যন্ত পানি, কিন্তু ভরা বর্ষায় এই আপাত শান্ত খালের ভয়ংকর রূপ দেখার সুযোগ
হয়েছিল সেই ২০১৪ সালে। সেই রূপ শুধু চোখ চেয়ে দেখার, ক্যামেরার লেন্স বা কবির
কলমের সাধ্য নেই সেই রূপ তুলে ধরার, আর আমার চেষ্টা তো হবে মূষিকের পর্বত প্রসব
করার সমান। ধীরে ধীরে এগিয়ে চলছে আমাদের ছোট্ট কাফেলা। মাঝে মাঝে থেমে থেমে পিছিয়ে
পরা সঙ্গীদের জন্য অপেখ্যা।
এভাবে এগোতে
এগোতে আমাদের প্রথম যাত্রা বিরতি প্রায় ৪৫ মিনিট পর এক নাম না জানা পাড়ায়। পাড়া
বলতে কয়েকটি ঘরে অল্প কিছু বাসিন্দা আর পথশ্রমে ক্লান্ত পথিকের স্রান্তি দূর করার
জন্য দুইটি ছোট্ট টং দোকান। দোকান ছোট্ট হলে কি হবে আপনার প্রয়োজন মেটানোর মত পসরা
ঠিকই আছে। একটু বিশ্রাম মিলতেই দলের সদস্যরা ক্ষুধার্ত বাঘের মোট ঝাপিয়ে পড়ল টং
দোকানের সামনে ঝোলানো কলার কাঁদির উপর। মুহূর্তেই কলার কাদি ফাঁকা। অবশ্য হবেই বা
না কেন। এইরকম সুমিষ্ট কলাতো আর ঢাকায় পাওয়া যায় না। পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে জানি
দুপুরের খাবার নাও পাওয়া যেতে পাড়ে, তাই আমিও গোটা ছয়েক কলা সাবাড় করে ফেললাম,
সাথে সেদ্ধ ডিম আর চা। বেশ কিছুটা সময় এখানে ব্যায় করে
পেট পূজা সম্পন্ন করে সবাই বেশ চাঙ্গা। এবার আবার পথ চলা শুরু। রেমাক্রি খালের পাশ
দিয়ে কখনও সমতল রাস্তা, কখনও বা পাকদণ্ডী বেয়ে সামান্য চড়াইয়ে উঠা, পরখনেই আবার নেমে
আসা, এভাবেই চলছিল। কোথাও কোথাও রাস্তা এতটাই সরু যে কোনরকমে একজন পার হওয়া যায়। কিছু
কিছু যায়গায় তো বেশ বিপদজনক খাদ আর সাথে সেলফের মত কোনরকমে এক পা দেওয়া যায় এইরকম রাস্তা।
নিচের দিকে তাকালেই মাথা ঘুরিয়ে উঠবে। এই জাইগাগুলি খুব সাবধানে পাড় হতে হোল। এই রাস্তা
পাড় হওয়ার সময় একজন আরেকজনকে যেভাবে সাহায্য করেছে তা সত্যি প্রশংসনীয়। বলা হয়ে থাকে
যে পাহাড়ে যে বন্ধুত্ত গড়ে উঠে, তা নাকি চিরস্থায়ী। আসলেই তাই, পরিবার পরিজনহীন এই
রুক্ষ পরিবেশে যে কোন বিপর্যয়ে এই সঙ্গীরাই তো ভরসা।
পথ চলার ফাঁকে ফাঁকে চলছিল অভিজ্ঞতার বিনিময়
আর বিভিন্ন আঙ্গেলে ছবি তোলা। এর মধ্যেই বেশ কয়েকবার পাড় হয়েছি রেমাক্রি খাল, কোন বারই
পানি হাটুর উপর উঠেনি। অথচ মনে পড়ল সেই ২০১০ সালের প্রথম নাফাখুম জয়ের কথা, যেবার বেশ
কয়েক যায়গায় পিঠের ব্যাগ প্যাক মাথায় নিয়ে একজন আর একজনের হাত ধরে মানব শিকল বানিয়ে
বুক সমান পানি পার হয়েছিলাম।
বেশ কয়েক যায়গায় দেখলাম রাস্তা মেরামতের কাজ চলছে। এই
জিনিসটা বেশ প্রশংসনীয়। খোঁজ নিয়ে জানলাম টুরিস্ট সিজনে প্রচুর টুরিস্ট আসার সম্ভবনা
তাই স্থানীয় প্রশাশনের উদ্দ্যগে এই আয়োজন। কিন্তু আরেকদিকে শঙ্কিতও হলাম এই ভেবে যে,
আগের যে রহস্য, রোমাঞ্চ তা বোধহয় আর থাকছে না। মনে মনে কল্পনা
করলাম ১০ বৎসর পরের ছবি- ফোর হুইল জীপ ড্রাইভ করে চলছি নাফাখুমের পানে। পাশের সিটে
কাঁচা পাকা দাঁড়ি গোঁপ নিয়ে ভারিক্কী চেহারার ভুঁড়িওয়ালা মানসিক রোগের প্রফেসর এ
এস এম মোরশেদ। সাথে গাড়ির মিউজিক প্লেয়ারে ভেসে আসা পাহাড়ি গান “চল গওরি লে যাবো
তোকে মোর গাও”। পিছন থেকে সঙ্গী ইমরানের ডাক “থামতে হবে, পিছনের সবাই বেশ পিছিয়ে
পড়েছে” শুনে মুহূর্তেই নেমে আসলাম বর্তমানে। আবার একটু যাত্রা বিরতি।
পাশেই একটি ছোট্ট ঝর্নার
পানি তার ক্ষীণ কটি তনু দেহ নিয়ে মিলেছে রেমাক্রি খালে। এইরকম অসংখ্য ঝর্নার মিলনে
পুষ্ট হচ্ছে রেমাক্রি খাল। এই দান সে বয়ে নিয়ে চলসে সাঙ্গু নদীর সাথে মিলিত হতে,
যে সঙ্গম আমরা ফেলে আসেছে রেমাক্রি বাজারের কাছে রেমাক্রি ফলস এ। ঝর্নার পাশে
বিস্রামের ফাঁকে সবাই যার যার পানির বতলে পানি সংগ্রহ করে নিল। সাথে থাকা
বিস্কুটের প্যাকাটেরও সদ্গতি হোল। এই সময় আমাদের পাশ দিয়েই এগিয়ে যাচ্ছিল আর একটা
গ্রুপ। কাঁচা পাকা মিলিয়ে ১০ জন। দলের বেশ কয়েকজন পঞ্ছাশোরধ মহিলা। এগিয়ে গিয়ে কথা
বললাম, উনারা পুরো পরিবার এসেছেন। দলের সবচেয়ে ছোট জনের বয়স ৫। ছেলে, ছেলের বউ,
মেয়ে, নাতি নাতনি নিয়ে এসেছেন। কথা প্রসঙ্গে আমি ৭ বার নাফাখুম এসেছি শুনে চোখ
কপালে তুলে ফেললেন। জিগ্যেস করলেন কি এমন পাই যে বার বার আসি। সত্যি এই প্রশ্নটার
উত্তর আমার আজও অজানা। শুধু জানি প্রথম প্রেম যেন সারাটা জীবন আছন্ন করে রাখে,
পাহাড়ের প্রতি আমার প্রেম অনেকটা সেইরকমই। প্রিয় বন্ধু রোমেলকে জিগ্যেস করলে ও ও
হয়ত একই উত্তর দিবে। এই প্রশ্নের উত্তর চিন্তা করতে করতে আবার হাঁটা শুরু করলাম।
রেমাক্রি থেকে শুরু করার প্রায় ৩ ঘণ্টা পর পৌঁছলাম নাফাখুমে। মনে পড়ল প্রথমবার
যেবার এসেছিলাম মাত্র ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট লেগেছিল। সূর্য ডুবে যাবে তাই তাড়া ছিল
দ্রুত পৌছার। নাফাখুম দর্শনের সেই প্রথম স্ম্রিতির উচ্ছাস এখনও মস্তিস্কের গ্রে
ম্যাতারে গেথে আছে। মন থেকে সে স্মৃতি কখনই মুছে যাওয়ার নয়। শেষ বয়সে আলঝেইমার রোগ
সে স্মৃতি ভোলাতে পারবে কিনা সন্দেহ। নাতি নাতনীর কাছে এইসব গল্প হয়ত মনে হবে
বুড়োর ভুলো মস্তিস্কের অতি কথন। যেহেতু এবারের গন্তব্য অমিয়াখুম, তাই প্রথমে
সিধান্ত নিয়েছিলাম নাফাখুমের পানিতে নামব না, কিন্তু দলের নতুন সদস্যদের উৎসাহ
দেখে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না। গা ভেজাতেই হোল। শীতল পানি মুহূর্তেই পথশ্রমের
সব ক্লান্তি মুছিয়ে দিল। রাইসুল, ইমরান,সমাপ্তি, মুশফিক, জিয়া, রওনক, তওহীদ ভাই ও
তার স্ত্রী, শান্তনু এদের উচ্ছ্বাস ছিল দেখার মত। পানি থেকে উঠে আমি আর এক্রাম ভাই
যোহরের নামাজ আদায় করে নিলাম। সংগে নিয়ে আসা পেপে আর সকালের খিচুড়ি সবাই মিলে ভাগ
করে খেলাম।
আমাদের যেতে হবে সেই থুইসা পাড়া, সবে পথের
অর্ধেক মাত্র এসেছি, তাই সবাইকে তাড়া দিয়ে আবার পথে নামতে হল। কয়েকজন ভেজা কাপড়েই
রওনা দিলাম। সকালের তীব্র শীতের ছিটে ফোটাও তখন অবশিষ্ট নেই। মাথার উপর মধ্যানের
গণগণে সূর্য। দ্রুতই ভেজা কাপড় শুকিয়ে গেল। আজ সারাদিনে যেহেতু খুব বেশি পথ
পরিক্রমা নেই, তাই বেশ হেলে দুলেই পথ চলছিল সবাই। মাঝে মাঝে থেমে থেমে ছোট্ট
যাত্রা বিরতি। এরই মাঝে হঠাথ দলের একজনের চিৎকার, কাকে যেন জোঁকে ধরেছে। খুব
সন্তর্পণে জোঁক সরানো হোল। এই সুযোগে বাকিরাও নিজেদের পা চেক করে দেখল বেশ কয়েকজেনকেই
জোঁকে ধরেছে। বেশ কয়েকটাতো রক্ত খেয়ে ফুলে ঢোল। জোঁক সরানোর
পর ও কয়েকজনের পা দিয়ে রক্ত পড়ছিল, সেই জাইগাগুলি ব্যান্ড এইড লাগিয়ে দেয়া হোল। আবার
পথ চলা। এবার সবাই খুব সাবধান। চারপাশের প্রকৃতির রূপ উপভোগের চেয়ে জোঁক থেকেই যেন
বাঁচতে বেশি ব্যস্ত সবাই। ফলে চলার গতি হয়ে গেল আরও ধীর। পথ চলতে মাঝে মাঝে দেখা মিলছিল
নাম না জানা রং বেরঙের পাহাড়ি ফুলের। কোনটা বেগুনি বা কোনটা সাদা কিংবা হলুদ। কিছু
যায়গা তো বুনো ফুলের গন্ধে ম ম করছিল। তবে সেই মৌতাতে মন দেয়ার মত মানসিকতা অনেকেরই
ছিল না। জোঁকের কামড় অনেকেরই জীবনের প্রথম অভিজ্ঞতা, যা দলের নতুনদের উদ্যমের ভাটা
আনতে যথেষ্ট ছিল।
মাঝে পেড়িয়ে এলাম উ লাং পাড়া। আর জিনা পাড়া পৌছতে
পৌছতে বিকেল গড়িয়ে প্রায় সন্ধ্যা। আমদের আজকের গন্তব্য থুইসা পাড়া খুব কাছে, একটি পাহাড়ের
দুরত্ব। তাই জিনা পাড়ায় একটা যাত্রা বিরতির সিধান্ত হোল। এখানেও ছোট্ট টং দকানে সেই
সকালের দৃশের পুনঃরাবৃতি।
অবশেষে থুইসা
পাড়ার দিকে যতক্ষণে পা বাড়ালাম ততোক্ষণে পাহাড়ে রাত নেমে এসেছে। সেই সাথে বাড়ছে শীতের
তীব্রতা। সবাই যার যার শীতের কাপড় পড়ে নিয়ে টর্চ জ্বালিয়ে আবার পথ চলা শুরু করল। ছোট্ট
একটা পাহাড় পেড়িয়ে খুব অল্প সময়েই পৌঁছে গেলাম থুইসা পাড়ায়। ছিমছাম ছোট্ট পাহাড়ি পাড়া।
এখনও প্রযুক্তির খুব বেশি ছোঁয়া লাগেনি, পাড়ার লোকগুলো এখনো পরিচিত হতে পারেনি শহুরে
পঙ্কিলতায়। এই পাড়া থেকে অমিয়াখুম কাছে হওয়ায় এর গুরুত্বও বেড়ে গেছে বেশ। আমরা পৌছার
আগেই বেশ কয়েকটা গ্রুপ পৌঁছেছে। তাই থাকার যায়গা পেতে বেশ বেগ পেতে হোল। অবশেষে দুইটা
রুমে কোনরকমে থাকার যায়গা ম্যানেজ করা গেল। রুম বলতে বাঁশের মাচার উপর বাঁশের বেড়ার
ঘর। এই শীতের রাতে উপর নিচ, সামনে পিছে সবদিক থেকেই শীত ধুকবে। তো বুঝতেই পারছেন অবস্থাটা।
থাকার যায়গার তো ঠিক হোল, এবার পেট পুজার আয়োজন। প্রত্যেকবার এই গুরু দায়িত্ব বরতায়
আমার আর রোমেলের উপর। এবার জিয়া ভাই আর মুস্তাফিয ভাইয়ের স্কন্ধে এই ঝামেলা চাপিয়ে
দিয়ে আমরা একটু সস্থির নিঃশ্বাস নিলাম। সবে মাত্র স্লিপিং ব্যাগ
বিছিয়ে একটু শীত থেকে বাচার চেষ্টা করছি, এর মধ্যে ইমরান আর সমি ভাইয়ের চিৎকার।
আবার কাউকে জোঁকে ধরেছে। এবারের শিকার বিশাল বপুর রাইসুলের, তাউ গোপন যায়গায়। কি
আর করা নতুন সদ্যসদের উদ্যমে আরেক দফা ভাটা। টর্চ জ্বেলে যার যার শরীর চেক করে
জোঁক খোঁজার চেষ্টা চলল অনেকক্ষণ। একজন বুদ্ধি দিল গোসল করে নেওয়ার। এই শীতের রাতে
পাহাড়ি ঝর্নার হিমশীতল পানি দিয়ে অগ্যাতা গোসল সারতে হোল অনেককেই। গোসল সেরে বেশ
কিছুক্ষণ পাড়ার লোকেদের জ্বালান আগুন পোহালাম। পাশের টং দোকান থেকে চা বিস্কুট
খেয়ে বেশ চাঙ্গা অনুভব করছিলাম, সেই সাথে আড্ডা তো চলছিলই। এর মধেই বন্ধু মুনির
খবর দিল এক পাহাড়ের উপর রবি সিম সহ মোবাইল একটা বাঁশের উপর আড়াআড়ি রাখলে নেটওয়ার্ক
পাওয়া যায়। পরিবার পরিজনের সাথে যোগাযোগের একটা চেষ্টা হিসাবে রমেলের ভাই পায়েলের
মোবাইল থেকে বাসায় কথা বললাম। বেশ একটা উত্তেজনাকর অনুভুতি। এরই মাঝে আমাদের গাইড
সা সুই এসে খবর দিল রাতের খাবার রেডি। পাহাড়ি মোরগের ঝোলের তরকারি, কুমড়ার সবজি,
ডাল আর ভাত। সত্যি মুস্তাফিয ভাই আর জিয়া ভাই কে ধন্যবাদ এই অমৃত উপহার দেয়ার
জন্য। পেট পুরে খেয়ে সোজা স্লিপিং ব্যাগের ভেতর। এর আগেই ঠিক করে রাখলাম আগামীকাল
ভোর ৬ টায় ১৫ জন রওনা দিব অমিয়াখুমের পথে, আর বাকি ৮ জন ফিরতি পথে। কারন অমিয়াখুমের
পথে দেবতার পাহাড় নামে এক খাড়া পাহাড় পারি দিতে হবে, যেটা দলের অনেকের জন্যই বেশ
কঠিন একটা ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। এইসব চিন্তা করতে করতে কখন যে ঘুমে চোখ জরিয়ে গেছে
টেরও পাইনি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন